দলিলের জালিয়াতি চিনবেন কীভাবে? আসল ও নকল দলিলের পার্থক্য

জমির মালিকানার প্রধান ভিত্তি হলো এর দলিল। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, বর্তমানে নানা কৌশলে জমির জাল দলিল তৈরি করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার ঘটনা ঘটছে। একটি জাল দলিলের কারণে আপনার সারা জীবনের সঞ্চয় তো বটেই, এমনকি আপনার মালিকানাও হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই যেকোনো জমি কেনার আগে বা নিজের জমির দলিল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এর সত্যতা যাচাই করা অতীব জরুরি।
"সম্প্রীতি বাংলাদেশ"-এর আজকের পোস্টে আমরা এমন কিছু পরীক্ষিত উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে আসল ও নকল দলিলের পার্থক্য বুঝতে এবং জালিয়াতি থেকে সুরক্ষিত থাকতে সাহায্য করবে।
দলিলের ভৌত পরীক্ষা (Physical Examination)
পুরনো দলিলের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হিসেবে এর কাগজ ও কালির অবস্থা দেখুন।
- **স্ট্যাম্প পেপার:** আসল দলিলগুলো সাধারণত সরকার নির্ধারিত বিশেষ স্ট্যাম্প পেপারে করা হয়। কাগজের মান, জলছাপ এবং ক্রমিক নম্বর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
- **কালির বয়স:** একটি পুরনো দলিলের লেখা এবং স্বাক্ষর সময়ের সাথে সাথে কিছুটা হালকা ও বিবর্ণ হয়ে যায়। অন্যদিকে, জালিয়াত চক্র অনেক সময় নতুন কাগজে পুরনো তারিখ ব্যবহার করে, ফলে এর লেখা ও কালি অস্বাভাবিক নতুন দেখায়।
- **লেখা ও হাতের ছাপ:** একটি দলিলে একাধিক ব্যক্তির স্বাক্ষর ও টিপসই থাকে। সবগুলো স্বাক্ষর বা লেখার ধরণ একই ব্যক্তির কিনা, তা মনোযোগ দিয়ে দেখুন।
সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর ও সিলের সত্যতা যাচাই
প্রতিটি দলিলে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর এবং সরকারি সিলমোহর থাকে। যদি সম্ভব হয়, ওই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অন্য কোনো সমসাময়িক দলিলের সাথে স্বাক্ষর ও সিলের ধরণ মিলিয়ে দেখতে পারেন। অনেক সময় জালিয়াতরা নকল সিল ব্যবহার করে, যা আসল সিলের চেয়ে কিছুটা অস্পষ্ট বা ভিন্ন আকারের হয়।
রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের রেকর্ড যাচাই (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ)
দলিল যাচাইয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এর রেকর্ড পরীক্ষা করা।
- **বালাম বই (Volume Book):** প্রতিটি রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের তথ্য একটি সরকারি রেজিস্টার বা বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ থাকে। আপনার দলিলের নম্বর, তারিখ এবং দাতা-গ্রহীতার তথ্যের সাথে বালাম বইয়ে সংরক্ষিত তথ্যের মিল আছে কিনা তা মিলিয়ে দেখুন।
- **সূচি বই (Index Book):** প্রতিটি রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের জন্য বিক্রেতা এবং ক্রেতার নামে দুটি পৃথক সূচি তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে আপনি এই সূচি বই থেকে আপনার দলিলের রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে পারবেন। যদি বালাম বা সূচি বইয়ে আপনার দলিলের কোনো রেকর্ড খুঁজে পাওয়া না যায়, তবে এটি জাল হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ।
বিক্রেতার তথ্য ও அடையாளের মিলকরণ
দলিলের তথ্যের পাশাপাশি বিক্রেতার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া জরুরি। দলিলে উল্লিখিত বিক্রেতার নাম, বাবার নাম, ঠিকানা এবং ছবির সাথে তার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা পাসপোর্টের সকল তথ্য হুবহু মিলছে কিনা তা যাচাই করুন। অনেক সময় অন্যের ছবি বা পরিচয় ব্যবহার করেও জমি বিক্রির নামে জালিয়াতি করা হয়।
ভূমি অফিসে ‘সম্পত্তি হস্তান্তর নোটিশ’ (LT Notice) যাচাই
জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে একটি নোটিশের কপি সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা AC (Land) অফিসে পাঠানো হয়। এই নোটিশের ওপর ভিত্তি করেই নামজারির প্রক্রিয়া শুরু হয়। আপনি AC (Land) অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন যে আপনার দলিলের বিপরীতে এমন কোনো নোটিশ সেখানে পৌঁছেছে কিনা। এটিও দলিলের সত্যতা যাচাইয়ের একটি পরোক্ষ কিন্তু কার্যকর উপায়।
জমির দলিল যাচাই একটি কারিগরি ও জটিল প্রক্রিয়া। সাধারণ মানুষের পক্ষে এর সকল দিক বোঝা কঠিন হতে পারে। সামান্য একটি ভুল আপনার বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই জমি কেনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
"সম্প্রীতি বাংলাদেশ" আপনার জমি কেনার প্রতিটি ধাপে দলিলের সঠিকতা যাচাইসহ সকল প্রকার আইনি সুরক্ষা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের বিশেষজ্ঞ দল আপনার বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখতে সর্বদা প্রস্তুত।